আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং যেভাবে শুরু করবেন
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো এবং আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কি কি প্রয়োজন তা অনেকেই জানতে চান। তাই আজকে আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করব। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কিভাবে করতে হয়, আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে ইনকাম করা যায়, আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
অনলাইনে অনেক ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড কাজ পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং মানে আমরা বুঝি মুক্ত পেশা। কিন্তু তারপরেও আমাদের অনেক ব্যস্ততার ভিতরে কাজ করে যেতে হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করতে হয়। ক্লায়েন্টদের নিয়ে অনেক চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু এমনকি কোনো কাজ আছে যার মাধ্যমে আপনি সত্যি সত্যি মুক্ত ভাবে কাজ করতে পারবেন, আপনার কোনো বস থাকবে না।
সূচিপত্র: আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং যেভাবে শুরু করবেন
.
হ্যাঁ, এমন অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন নিজেই নিজের বস হতে পারবেন। তেমন একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং এর একটি সেক্টর হল আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং। চলুন ধাপে ধাপে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবেন এবং সেখান থেকে ইনকাম করবেন।
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কি
আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে বুঝায়, আমাজন কোম্পানির হয়ে মার্কেটিং করা। অর্থাৎ, আমাজন কোম্পানির প্রোডাক্ট আপনি যদি অন্যদের কাছে বিক্রি করতে পারেন তাহলে তারা আপনাকে কিছু কমিশন দিবে। এটিই হল অ্যামাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং।
সহজ ভাবে বলতে গেলে আমাজনের প্রোডাক্টগুলো অন্যদের কাছে প্রমোট করে উপার্জন করার প্রক্রিয়াকে আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য কি কি প্রয়োজন
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য কিছু জিনিস এবং দক্ষতা প্রয়োজন। তাহলো:
- আপনি যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রোডাক্ট সেল করতে চান তাহলে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ইউনিট কন্টেন্ট লেখার দক্ষতা থাকতে হবে।
- SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) সম্পর্কে দক্ষতা থাকতে হবে। এর ফলে আপনি আপনার কন্টেন্ট র্যাংক করাতে পারবেন এবং সহজে প্রোডাক্ট সেল দিতে পারবেন।
- আপনার যদি ওয়েবসাইট না থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একাউন্ট থাকতে হবে এবং এগুলো ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, লিংকডইন ইত্যাদি।
- ধৈর্য এবং পরিশ্রম এর মাধ্যমে আপনাকে কাজ করে যেতে হবে তাহলে আপনি আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে হয়তো আপনি চিন্তিত আছেন। তাহলে এখন চিন্তার কোনো কারণ নেই কেননা এখন আমরা আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আপনি কিভাবে শুরু করবেন এবং কিভাবে আয় করবেন সে সম্পর্কে আপনাকে জানাবো।
আমাজনে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। চলুন সেসব এখন সম্পর্কে জেনে নেই।
শুরুতে আপনাকে আমাজনে একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। এটি আপনি আপনার মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার দিয়ে করতে পারবেন। প্রথমে আপনি google এ গিয়ে Amazon.com লিখে সার্চ দিন। এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর একদম নিচে চলে আসলে আপনি "Become an Affiliate" অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলে আপনি সাইন আপ করার অপশনটি পেয়ে যাবেন।
সেখানে প্রবেশ করুন এবং তারপরে Create your Amazon account অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন আপনার নাম, ইমেইল এড্রেস এবং পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এরপর নিচের দিকে থাকা Create your Amazon account অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার ইমেইলে একটি কোড পাঠানো হবে সেই কোডটি কপি করে Verify email address এ বসাতে হবে।
আরও পড়ুন ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করার উপায়
এরপর আবার আপনাকে Create your Amazon account অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপর অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য আরও কিছু ইনফরমেশন আপনার কাছ থেকে চাইবে যেমন আপনার নাম, ঠিকানা, দেশের নাম (আপনি যেহেতু বাংলাদেশ থেকে আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন সেহেতু বাংলাদেশ সিলেক্ট করতে হবে), পোস্টাল কোড, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি সিলেট করে Next বাটনে চাপ দিন।
এরপর আপনি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন নাকি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে মার্কেটিং করবেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের লিংক দিয়ে দিন।
আপনার ওয়েবসাইটে যদি ভালো ভিজিটর থাকে অথবা আপনার ফেসবুক আইডিতে যদি প্রচুর পরিমাণ ফলোয়ার থাকে তাহলে আপনি এসব প্লাটফর্মের লিংক দিয়ে দিবেন, তাহলে আপনি সহজেই অনেক প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন এবং অনেক কমিশন পাবেন। তো আপনার যেকোনো প্ল্যাটফর্ম এর লিংক অ্যাড করে Next এ ক্লিক করুন।
এর পরের পেজে কিছু নির্দেশনা দেখতে পাবেন যেমন আপনার ওয়েবসাইটে এডাল্ট কোনো কিছু রয়েছে কিনা সেটি থাকলে Yes অথবা No অপশনে ক্লিক করে Confirm করুন। এর পরের পেজে আপনার প্রোফাইল তৈরি করার জন্য একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে বিভিন্ন ইনফরমেশন দিয়ে। এরপর এই পেজের শেষের দিকে একটি ক্যাপচা পূরণ করতে হবে সেটি পূরণ করে নিচে একটি বাটন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করে টিক চিহ্ন দিতে হবে।
তারপরে Finish এ ক্লিক করলে আমাজনে আপনার একটি আইডি তৈরি হয়ে যাবে। পরের পেটে আপনি আপনার অ্যাসোসিয়েট আইডি দেখতে পাবেন, এটি অবশ্যই আপনি কপি করে অন্য কোন জায়গায় সেভ করে রাখবেন কেননা এটি পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে। এরপর নিচে থাকা Now বাটনে ক্লিক করে আপনাকে ব্যাংক একাউন্ট অ্যাড করে দিতে হবে, আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আপনার ব্যাংক একাউন্টটি অ্যাড করুন।
এরপর ট্যাক্স ইনফরমেশন ইন্টারভিউ নামের একটি পেজ চলে আসবে। এখানে সঠিকভাবে আপনার তথ্যগুলো সাবমিট করে কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করুন। এরপর পরবর্তী অপশন গুলো সাবমিট করলে আপনাকে একটি রেফারেন্স আইডি দেওয়া হবে এটি কপি করে নিন এবং অন্য কোথাও সেভ করে রাখুন। কেননা পেমেন্ট নেওয়ার সময় এটি কোনো কাজে লাগতে পারে।
ব্যাস আপনার কাজ শেষ। এখন শুধু আপনাকে amazon.com এ গিয়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট দেখতে পাবেন সেগুলোর লিংক তৈরি করে আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে হবে। এখন প্রশ্ন হল আপনি লিংক কিভাবে তৈরি করবেন। চলেন সম্পর্কে জেনে নেই। আমাজন ওয়েবসাইটে কোনো প্রোডাক্ট এর পোস্টে ক্লিক করার পর উপরের লাইনে Text নামের অপশন দেখতে পাবেন।
এই অপশনে ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন ওই প্রোডাক্ট এর একটি লিংক তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই লিংক কপি করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অথবা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে লিংক শেয়ার করে পোস্ট করুন।
আরও পড়ুন টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার উপায়
এরপর কেউ যদি সেই লিংকে প্রবেশ করে সেই প্রোডাক্টটি ক্রয় করে তাহলে আপনি সেখান থেকে কমিশন পাবেন। এভাবে আপনি আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করে ইনকাম করতে পারেন। এই উপায়ে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম বৃদ্ধি করার উপায়
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম বৃদ্ধি করতে হলে আপনাকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটে যদি ভিজিটর না থাকে অথবা আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে যদি আপনার ফলোয়ার না থাকে তাহলে কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আপনার বেশি ইনকাম হবে না।
আরও পড়ুন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে আয়
আপনার ইনকাম বৃদ্ধি করার জন্য ফেসবুকে প্রোডাক্টের পোস্টগুলো বুস্ট করতে পারেন অর্থাৎ, বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। আপনার প্রোডাক্টগুলো কিনতে চায় এমন মানুষদের টার্গেট করতে পারবেন বুস্ট করার মাধ্যমে এবং তাদের কাছে সহজেই আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে আপনাকে ইনকামও অনেক গুণে বৃদ্ধি পাবে।
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর অনেক সুবিধা রয়েছে। আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রধান সুবিধা হল এখানে কোন ইনভেস্টমেন্ট করতে হয় না। ফ্রিতে একাউন্ট খোলা যায় এবং প্রোডাক্ট সেল করলেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
এর আরেকটি প্রধান সুবিধা হল এখানে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন। অর্থাৎ একটি পোস্ট শেয়ার করলে এ পোস্টের মাধ্যমে যতজন মানুষ প্রোডাক্ট ক্রয় করবে যতদিন ক্রয় করবে আপনার ইনকাম হতেই থাকবে। আমাজনে অনেক ধরনের প্রোডাক্ট রয়েছে, এখানে আপনি লাখ লাখ প্রোডাক্ট পাবেন। আপনি আপনার পছন্দমত প্রোডাক্ট প্রমোট করতে পারবেন।
FAQs: আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো
1. কিভাবে আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবো?
উত্তর: আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা অনেক সহজ। আপনাকে প্রথমে,
- আমাজন ডটকম ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইন আপ করে নিতে হবে।
- আপনি আপনার ওয়েবসাইটের লিংক অথবা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোর লিংক অ্যাড করতে হবে।
- আমাজন থেকে আপনাকে আকর্ষণীয় কোনো প্রোডাক্ট বেছে নিয়ে সেটির লিংক তৈরি করতে হবে।
- এরপর আপনাকে আপনার ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে সেই লিংকগুলো শেয়ার করে পোস্ট করুন।
- আপনাকে এমনভাবে পোস্ট করতে হবে যাতে ভিজিটররা প্রোডাক্ট কিনতে উৎসাহিত হয়।
- কেউ যদি আপনার লিংকের মাধ্যমে প্রোডাক্ট ক্রয় করে তাহলে আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
2. আমাজন প্রোগ্রামের লিংকের কুকির সময়সীমা কত?
উত্তর: আপনি যদি আমাজন প্রোগ্রামের লিংক তৈরি করে কোথাও শেয়ার করেন তাহলে ২৪ ঘণ্টা মধ্যে কেউ যদি আপনার লিংকের মাধ্যমে প্রোডাক্ট ক্রয় না করে, তাহলে আপনি কমিশন পাবেন না। সুতরাং আমাজন প্রোগ্রামের লিংকের কুকির সময়সীমা হল ২৪ ঘণ্টা বা একদিন।
3. আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কত শতাংশ কমিশন পাওয়া যায়?
উত্তর: আমাজনে লাখ লাখ পণ্য রয়েছে। প্রোডাক্ট এর ধরণ অনুযায়ী আপনাকে কমিশন দেওয়া হবে। সাধারণত ১ থেকে ১০% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়।
আমাদের শেষ কথা
আমরা অনেকেই অনলাইনে ব্যবসা করতে চাই বা ব্যবসার সাথে জড়িত হতে চাই। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসা হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। এটি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হল এখানে কোনো প্রকার ইনভেস্টমেন্ট এর প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান তাহলে আমাজন আপনার জন্য বেস্ট প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, আশা করি আপনি আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ
অনলাইন ইনকাম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url