মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি ও স্ট্যাটাস

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা হয়তো মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি সম্পর্কে খুঁজাখুঁজি করছেন। আমাদের চারপাশে মুখোশধারী মানুষের অভাব নেই। তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী মুখোশ পাল্টিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে। এজন্য মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সকলকে জানাতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি
সূচিপত্রমুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি এবং অন্যান্য স্ট্যাটাস নিয়ে জানানোর জন্যই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। সমাজে এমন অনেক মানুষ বসবাস করেন, যারা কিনা দুই ধরণের মুখ নিয়ে চলেন, অর্থাৎ দুই ধরণের পার্সোনালিটি। মূলত তাদেরকেই বলা হয় মুখোশধারী ব্যক্তি। এমন মানুষেরা নিজেদেরকে একেক জায়গায় একেক ভাবে উপস্থাপন করেন। তাদের নিয়ে সমাজে অনেক রকমের উক্তিই প্রচলিত আছে। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি সম্পর্কে আলোচনা করব।

ভূমিকা

সমাজে মুখোশধারী মানুষের কোনো অভাব নেই। বর্তমান সময়ে এত এত মানুষের ভিড়ে কে ভালো, আর কে-ই বা খারাপ তা বোঝার কোনো উপায় নেই। কারণ, কেউ বাহিরে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করলেও, অনেক সময় ভেতর থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ধরণের মন-মানসিকতা নিয়ে চলাফেরা করে।

আর এরকম মানুষদের ভিড়ে ভালো মানুষেরা হারিয়ে যায়। তাই দিনশেষে ভালো কিংবা মুখোশধারী মানুষদেরকে চিনে ফেলাটা মোটেও সহজ কথা নয়। তবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল যেহেতু মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি সম্পর্কে, তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে ‘মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি’ গুলো তুলে ধরা যাক।

মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি

মুখোশধারীরা সাধারণত একেক জায়গায় একেক রকম পার্সোনালিটি নিয়ে চলাফেরা করেন। তাদের এই রূপ প্রকাশ করে এমন কিছু উক্তি নিচে তুলে দেয়া হলো:

১. মুখোশধারী মানুষের জীবনের আসল উদ্দেশ্য কখনোই বোঝা সম্ভব নয়। কারণ, যারা সমাজে মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় তারা কেবলমাত্র তাদের লোক দেখানো সত্তাটাই সকলের সামনে তুলে ধরে। তাদের প্রকৃত রঙ-টা কখনোই কেউ বুঝে উঠতে পারে না। মূলত মুখোশধারী ব্যক্তিই কারো কাছে এই রঙ প্রকাশ করে না।

২. একজন মুখোশধারী ব্যক্তি সবসময়ই নিজের মধ্যে দুই ধরণের সত্তা নিয়ে চলাফেরা করেন। আর এই দ্বৈত সত্তা নিয়ে জীবনযাপন করার অভ্যাসই তাদেরকে ধীরে ধীরে নিকৃষ্ট জীবে পরিণত করে।

৩. মুখোশধারী মানুষেরা নিজেদেরকে এক প্রকার মিথ্যা আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখে। তাই তাদের প্রকৃত রূপটা খুঁজে বের করা আসলে খুবই কষ্টসাধ্য। তাদের প্রকৃত রূপটা সবসময়ই অগোচরে থেকে যায়।
৪. শামুক যেমন নিজের খোলসের ভেতর লুকিয়ে রাখে, মুখোশধারী মানুষও তেমনি নিজেদের নকল রূপটা বাহিরে দেখিয়ে বেড়িয়ে, আসল রূপটাকে সকলের থেকে লুকিয়ে রাখে।

৫. মুখোশধারী মানুষেরা অন্যদেরকে ধোঁকা দিতে অভ্যস্ত। কিন্তু তারা বাহিরের দিক থেকে মানুষকে তাদের নকল রূপ দেখিয়ে, মুখোশের আড়াল থেকে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।

মুখোশধারী মানুষ নিয়ে ভিন্নধর্মী উক্তি

সবসময় যে মুখোশধারী ব্যক্তি বলতে খারাপ মানুষকেই বোঝাই আমরা, সেটা কিন্তু নয়। মুখোশধারী শব্দটির কিন্তু আরও একটা ব্যাখ্যা আছে। অনেক সময় আমরা অনেকেই নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি। সাধারণত, ইংরেজিতে যেটাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘ইন্ট্রোভার্ট’ (Introvert) নামে।

কেউ কেউ এর মানে বলতে একঘেয়েমি কিংবা ভবঘুরে মানুষও বুঝে থাকেন। তবে বিষয়টা কিন্তু আসলে সেরকম নয়। এরকম মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি সম্পর্কে আমরা নিচে আলোচনা করব।

সমাজে আমরা কেউই প্রকৃত সুখী নই। অনেকেই মানুষের সামনে নিজেকে অনেক হাসিখুশি ভাবে উপস্থাপন করি। কিন্তু বাস্তব জীবনে সবারই কোনো না কোনো দুঃখ থাকেই। আর এগুলো মানুষকে বুঝানো যায় না। মূলত অনেকে ইচ্ছে করেই অন্য মানুষের কাছে নিজের ব্যক্তিগত দুঃখগুলো শেয়ার করতে চান না। ঠিক এ কারণে তারাও কিন্তু এক প্রকার মুখোশধারী মানুষ।
আর এ ধরণের মানুষেরা মূলত অন্যকে ধোঁকা কিংবা কষ্ট দেন না। উল্টো নিজেরাই শত সহস্র কষ্ট লুকিয়ে সমাজে সকলের সামনে নিজেকে সুখী মানুষ রূপে উপস্থাপন করেন। এ ধরণের মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তিগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
  • প্রতিটি মুখোশধারী মানুষের জীবনের পেছনেই লুকিয়ে থাকে এক অজানা গল্প। আর এই অজানা এক কালো অধ্যায়কে লু্কিয়ে রেখে তারা নিজেদের জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে আপন গতিতে এগিয়ে যান।
  • আমরা কেউই চাইনা নিজের সম্পূর্ণ রূপটা অন্যের কাছে প্রকাশ করতে। সবাই চাই তাদের কিছু সুখ, কিছু দুঃখ একান্তই নিজের থাকুক। আর এই আড়ালের খেলা খেলতে খেলতে কখন যে আমরা একেকজন একেকটা মুখোশধারী মানুষে পরিণত হই, তা আমরা বুঝতেই পারিনা।
  • আমরা অনেকসময় অন্যকে সান্ত্বনা দেই, অন্যকে উৎসাহিত করি, অন্যদের সুখে দুঃখে পাশে থাকি। নিজেদের জীবনের দূর্বলতা গুলো অন্যের কাছে প্রকাশ করতে চাই না। আর এভাবেই একটা সময় আমরা পরিণত হই এক প্রকার মুখোশধারী মানুষে।
এ ধরণের মুখোশধারী মানুষের জীবনে নানারকম বাধাবিপত্তি থাকে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারা অন্যের দুঃখগুলো সামলাতে পারেন ঠিকই। কিন্তু নিজেদের দুঃখের কথা কাউকে বলতেও পারেন না এবং সইতেও পারেন না।

কোনো এক গল্পে বলা আছে, “একজন ব্যক্তি একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে গিয়েছিলেন। তিনি তখন তার মানসিক অবনতি, হতাশা সবকিছুর কথাই ডাক্তারকে বলেন এবং নিজের ডিপ্রেশন কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন তা সম্পর্কে সেই মনোবিজ্ঞানীর কাছে উপদেশ চাইতে থাকেন। তখন তাকে সেই মনোবিজ্ঞানী এক মজার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি তাকে সন্ধ্যাবেলা শহরের বিখ্যাত জাদুকর পেগলিয়াচ্চি-র শো তে যেতে বলেন।

কারণ, পেগলিয়াচ্চি ছিলেন এমন একজন যিনি কিনা তার শো এর মাধ্যমে মানুষকে হাসাতেম, মানুষের দুঃখ দূর করতেন, মানুষের কষ্ট দূর করতেন। মানুষ হতাশাগ্রস্ত হলেই তার শো দেখতে যেতেন। যাই হোক, মনোবিজ্ঞানী লোকটিকে এই পরামর্শ দিলে লোকটি বলে ওঠেন ‘আমিই পেগলিয়াচ্চি’।” আর এই কাহিনীটি সারা বিশ্বের মানুষের মাঝেই জনপ্রিয়।
অর্থাৎ যে কিনা সারা দেশ, সারা শহরের মানুষের দুঃখ, হতাশা দূর করেন, তিনি নিজেই মনোবিজ্ঞানীর কাছে এসেছেন নিজের দুঃখ কষ্ট দূর করার উপায় জানতে চাওয়ার জন্য। আর এরাও কিন্তু একপ্রকার মুখোশধারী মানুষ। যারা কিনা নিজেদের দুঃখ লুকিয়েও সুখী থাকার ভান করেন, অন্যকে সুখী রাখেন। এ ধরণের মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি:
  • সুখী মানুষেরা যে সবসময় সুখী তা নয়। পৃথিবীতে শতভাগ সুখী মানুষ বলতে কেউই নেই। সবাই মুখোশের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখেন।
  • আমরা কেউই নিজেদের গল্পে সুখী নই। আমরা সকলেই নিজেকে আমাদের নকল রূপে উপস্থাপন করি। একদিক থেকে বলতে গেলে বাস্তব জীবনে আমরা সবাই ‘পেগলিয়াচ্চি’।
  • আমি নিজেকে যে মানুষ হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করি, আমি আসলে তা নই। বাস্তব জীবনে আমি সেই গল্পের একজন ‘পেগলিয়াচ্চি’।
  • মুখোশধারী মানুষেরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে এক প্রকার সংকট এবং দ্বিধায় আটকে থাকেন। আর এ কারণে তারা মুখোশের আড়াল হয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকেন।

মুখোশধারী মানুষ নিয়ে স্ট্যাটাস

  • কিছু হলেই আমরা নিজেদেরকে আড়াল করে ফেলতে চাই, লুকিয়ে থাকতে চাই। প্রকৃতপক্ষে আমরা সকলেই সুখী ও দুঃখীর মুখোশের আড়ালে লুকায়িত।
  • যারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, তারা কোনোদিনই নিজেদের জীবনে সফল হয়না।
  • বাহিরে এক আর ভেতরে আরেক রকমের মন মানসিকতা নিয়ে চলাফেরা করলে কেউ কোনোদিনই নিজেদের কোনো উদ্দেশ্যে সফল হতে পারেনা।
  • মুখোশের আড়ালে থেকে কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে দিনশেষে নিজেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এই কথাটা সকল মুখোশধারী মানুষের মনে রাখা উচিত।

মুখোশধারী বন্ধু নিয়ে উক্তি

সমাজে অনেক মুখোশধারী বন্ধু রয়েছে যারা আপনার প্রকৃত বন্ধু নয়, তবে বন্ধু রূপে একসাথে বসবাস করতে চায়। সেসব মুখোশধারী বন্ধু নিয়ে উক্তি নিচে দেওয়া হলো:
  • মুখোশধারী বন্ধুরা শত্রুদের চেয়ে অনেক গুণে ভালো। শত্রুদের চেয়ে এরকম বন্ধুরা বেশি ভয়ংকর।
  • অসময়ে সবাই বন্ধু সেজে বসে থাকে, সঠিক সময়ে সেই বন্ধু গুলোর মুখোশ খুলে যায়।
  • মুখোশধারী বন্ধুদের থেকে সাবধানে থাকুন, কেননা তারা আপনার দূর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষতি করবে।
  • মুখোশধারী বন্ধুরা আপনার আশেপাশে আপনার প্রশংসা করে থাকে, কিন্তু আড়ালে গিয়ে ঠিকই আপনার নামে বদনাম ছড়ায়।

FAQ: মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর

১. মুখোশধারী মানুষ কাকে বলে?

উত্তর: যে মানুষ তাদের আসল স্বভাব, পরিচয় অন‍্যের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এরা সর্বদা ভিন্ন পরিচয় মানুষের কাছে ধরা দেয়। তারা সমাজে এক একজনের কাছে একেক রকম ভাবে প্রকাশিত হয়, অর্থাৎ ভিন্ন আচরণ করে।

২. মুখোশধারী মানুষ নিয়ে জনপ্রিয় উক্তি গুলো কী কী?

উত্তর: মুখোশধারী মানুষকে নিয়ে কিছু জনপ্রিয় সেরা উক্তিগুলো হলো:
  • মুখোশধারী মানুষ তাদের রিয়েল পরিচয় সব সময় ঢেকে রাখে কিন্তু সময় তা খুলে দেয়। (অর্থাৎ মুখোশধারী মানুষের আসল পরিচয় সময়ের সাথে সাথে সকলের সামনে খুলে যায়)
  • তুমি যদি মুখোশধারী কাউকে চিনতে চাও তাহলে তার কথায় বিশ্বাস না করে তার কাজের দিকে নজর দাও।
  • মুখোশধারী মানুষ কখনো তার পরিচয় গোপন রাখতে পারে না। একদিন না একদিন তার মুখোশ উন্মোচিত হয়।

৩. মুখোশধারী মানুষদের চেনার উপায় কি?

উত্তর: মুখোশধারী মানুষদেরকে চেনার জন্য তাদের কথা এবং কাজের মিল আছে কিনা সেটি লক্ষ্য করুন। কেননা তাদের বৈশিষ্ট্য হলো কথার সাথে কাজের অমিল রাখা। তারা নিজেকে সবসময় ঢেকে রাখার চেষ্টা করে এবং এই সুযোগে অন্যের ক্ষতি করে। তাদের আসল রূপ একসময় প্রকাশ পায়।

৪. মুখোশধারী মানুষদের থেকে কিভাবে সতর্ক থাকব?

উত্তর: তাদের কাছে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। তাদের যেকোনো বিষয়ে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন এবং তাদের কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে বিচার করুন। মুখোশধারী মানুষকে সহজে বিশ্বাস করবেন না।

৫. মুখোশধারী মানুষদের নিয়ে ইসলাম কি বলে?

উত্তর: ইসলামে মুখোশধারী মানুষদেরকে নিয়ে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। ইসলামী ভাষায় মুখোশধারী মানুষদেরকে বলা হয় মুনাফিক (ভণ্ড বা প্রতারক)। ইসলামে ভণ্ড বা প্রতারকের কোনো স্থান নেই। তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না, সব সময় মিথ্যা কথা বলে এবং তারা তাদের ওয়াদা রক্ষা করে না।

এই তিনটি হলো মুখোশধারী তথা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। হাদিসের ভাষ্যমতে মুনাফিকদের জায়গা জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে হবে।

উপসংহার

সব মিলিয়ে, এই ছিল আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূলবস্তু। মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি এবং মুখোশধারী মানুষ সম্পর্কেও আমরা অনেক কিছু জানানোর চেষ্টা করেছি এই আর্টিকেলে।

আমাদের লেখার মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখবেন এবং লেখাটি অন্যদের কাছে পাঠিয়ে তাদের দেখার সুযোগ করে দিবেন। একই সাথে কোনো অভিযোগ বা মন্তব্য থাকলে জানিয়ে দিবেন মন্তব্যের ঘরে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অনলাইন ইনকাম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url