সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম
আমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়মপ্রিয় পাঠক সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে দিবেন সে সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল। কিভাবে গঠনমূলক এবং আকর্ষণীয় বক্তব্য প্রদান করবেন সে সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাব। সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যারা গুছিয়ে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারেন না। তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক উপকারে আসবে।
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, অফিস আদালত কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে যাদের সাথে বছরের পর বছর চাকরি করেছেন তাদের জন্য সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখা জরুরি। আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে দিতে হয় এবং সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের কিছু নমুনা তুলে ধরব।
সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম
সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন, শুরুতে কি বলবে, বক্তব্য কিভাবে শেষ করবেন তা অনেকেই জানেন না। হঠাৎ করে উপস্থাপক যখন ঘোষণা দেন যে এবার বক্তব্য আপনি রাখবেন তখন হয়তো আপনি আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।
চিন্তার কোনো কারণ নেই কেননা আমাদের এ আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি সহজেই সুন্দরভাবে সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখতে পারবেন। বক্তৃতা দেওয়ার সময় যে সকল বিষয় খেয়াল রাখবেন তাহলো:
- শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুরু করতে পারেন। অথবা যার যে ধর্মের যে সকল কথা রয়েছে তা বলতে পারেন।
- যারা আয়োজক রয়েছেন তাদের নাম অবশ্যই বলবেন যেমন অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং আয়োজক (আয়োজকের নাম)। বিশেষ কোনো অতিথি বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে তার নাম এবং বিদায়ী সহকর্মীর নাম বলবেন।
- তারপর উপস্থিত প্রিয় শ্রোতা আসসালামু আলাইকুম বলে শুরু করবেন। অথবা যে যার ধর্মের অনুসারী সে ধর্মের বাক্যগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
- এরপর বিদায় সম্পর্কে মূল আলোচনাগুলো তুলে ধরবেন। আপনার অনুভূতি, সহকর্মীদের সাথে কাটানো মুহূর্ত ইত্যাদি তুলে ধরতে পারেন।
- সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানে সহকর্মীকে সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু কথা, কবিতার চরণ-গুচ্ছ ইত্যাদি তুলে ধরতে পারেন। আপনার সহকর্মীর সাথে কাটানো স্পর্শ করা দু-একটি স্মৃতির কথা বলতে পারেন।
- কথা বলার সময় অবশ্যই আবেগ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবেন। বলতে পারেন এটি একটি বিদায়ের অনুষ্ঠান মাত্র, মন থেকে চিরতরে বিদায় দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
- আপনার বিদায়ী সহকর্মীর ভালো দিকগুলো অবশ্যই তুলে ধরবেন। তাকে কৃতজ্ঞতা জানাবেন এবং তার গুণের উপর ভর করে কিভাবে আপনারা সকলে ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে পারবেন সে সম্পর্কে কিছু বক্তব্য তুলে ধরবেন।
- সবশেষে তার জন্য দীর্ঘায়ু কামনা এবং তিনি যেন তার পরিবারের সাথে ভালোভাবে সময় কাটাতে পারেন সে কামনা করতে পারেন। অতঃপর সালাম জানিয়ে সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষ করতে পারেন।
সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
আপনি যদি আপনার সহকর্মীর জন্য বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে চান, তাহলে আমাদের এই নমুনা ভালোভাবে মুখস্থ করে উপস্থাপন করতে পারেন। নিচের সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্যের নমুনা দেওয়া হলো:
উপস্থিত আজকের বিদায় অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি মহাশয়, শ্রদ্ধেয় অতিথিবর্গ, মাননীয় প্রধান শিক্ষক ও আমার সকল সহকর্মী তথা সহযাত্রীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং সালাম।
আমরা সবাই আজকে এখানে জড়ো হয়েছি আমাদের প্রিয় সহকর্মী মোহাম্মদ আসিফুর রহমানকে (এখানে আপনি আপনার সহকর্মীর নাম উল্লেখ করবেন) বিদায় জানাতে। তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি তার কর্মজীবনে সকল কাজ নিজ দায়িত্বের সাথে সঠিকভাবে পালন করেছেন। তার মতো সহকর্মী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানো যাচ্ছে যে তিনি আমাদের মাঝে আর থাকবেন না। আজ পর্যন্ত মোহাম্মদ আসিফুর রহমানকে কেউ খারাপ ভাবেনি। কারণ এটাই ছিল তার ব্যক্তিত্ব। পরিস্থিতি যাইহোক বা যত বড় সমস্যায় হোক না কেন তাকে আমরা কখনও মানসিক চাপে দেখিনি। এটাই হলো সফল ব্যক্তির লক্ষণ।
আজ আপনার বিদায়ের দিন, বিদায়ী জিনিসটা খুবই বেদনার, বিদায় বড় কষ্টের। তাই অত্যন্ত দুঃখের সাথে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হয় আজ মোঃ আসিফুর রহমানের বিদায় অনুষ্ঠান। যদিও আমি মনে করি এটি একটি বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কেননা মন থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় দেওয়া কিংবা নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আসিফুর রহমানের বিদায় সত্যিই আমাদের জন্য হৃদয় বিদারক, তিনি আর পূর্বের মতো আমাদের মাঝে আসবেন না ভাবতে কেমন যেন লাগে। কিন্তু এটা তো প্রত্যেক চাকরি জীবনের নিয়ম।
আরও পড়ুন বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ জন ধনী ব্যক্তি
পরিশেষে বলতে চাই আমরা আপনার নতুন সময় এবং নতুন অবস্থানের জন্য আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমরা সবাই আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং সুস্থতার জন্য মহান রবের কাছে প্রার্থনা করি। ধন্যবাদ।
সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য বাংলা
নিজের সহকর্মীর উদ্দেশ্যে বিদায় অনুষ্ঠানের ভাষণ বাংলায় যেভাবে দিতে পারেন তার নমুনা নিচে দেওয়া হলো:
আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন, আশা করি সকলেই ভাল আছেন এবং আমিও ভাল আছি। আজকে সত্যিই একটি কষ্টের, বেদনার এবং মন খারাপের দিন। আজ আমাদের প্রিয় সহকর্মী দীর্ঘ ৩০ বছরের কর্মজীবনের পরিসমাপ্তির দিন। কোনো সুগন্ধি কিন্তু কোনো মানুষের চোখ দিয়ে দেখতে পাওয়া যায় না, গেলেও তার গন্ধ মনকে সতেজ করে।
যখন কোনো সুরের পাখি দূরে চলে যায়, সে চলে গেলেও তার রেশ ফুরিয়ে কিন্তু যায় না, ঠিক তেমন ভাবেই আপনার এই বিদায়ের স্মৃতি ভুলে যেতে চাইলেও ভুলতে পারা যাবে না। আপনাকে আটকে রাখার ক্ষমতা আমাদের কারো নেই।
চোখ দিয়ে অশ্রু না ঝরিয়ে শুধু এটুকুই বলব, প্রতিষ্ঠান প্রায় সকল স্থানে আপনার স্পর্শ বিদ্যমান, এই প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি স্থানে আপনার স্পর্শ স্মৃতি হয়ে থাকবে আমাদের কাছে। আজকে আমরা শারীরিকভাবে আপনাকে বিদায় দিলেও মন থেকে কোনোকালে বিদায় দিতে পারব না।
একটি মোমবাতি নিজে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায় অন্যকে পথ দেখাতে গিয়ে, ঠিক তেমনি আপনি নিজে পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজ এবং সহকর্মীদের সাহায্য করে এসেছেন। আপনার ভালোবাসা কোনো দিনও ভোলার নয়। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার সহকর্মী হয়ে আমরা অনেক কিছু শিখতে এবং জানতে পেরেছি।
আপনার সহকর্মী হিসেবে কাজ করা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আপনার প্রতি আমাদের সকলের ভালোবাসা প্রমাণ করে যে আপনি একজন সফল মানুষ। কষ্ট ছাড়াও একটা বিষয় ভেবে খুব আনন্দ পাচ্ছি যে আমাদের বিদায়ী সহকর্মী নতুন একটি জীবন উপভোগ করতে যাচ্ছে তার পরিবারের সাথে এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে।
আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মব্যস্ততার কারণে তিনি হয়তো তার আপনজনদেরকে তেমন সময় দিতে পারেননি। কিন্তু এখন তিনি তার পরিবারকে যথাযথ সময় দিতে পারবেন। তার সুন্দর এবং সুস্থ একটি জীবন কামনা করে আজকের আমার প্রিয় সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষ করছি।
FAQ: আর্টিকেল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১. সহকর্মীর বিদায় বেলায় বক্তব্য দেওয়া কেন উচিত?
উত্তর: নিজের সহকর্মীর বিদায়ের দিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানানো গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে তার প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন এবং সেই সাথে কোনো অন্যায় করে থাকলে ক্ষমা চাইতে পারেন।
২. সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে শুরু করা উচিত?
উত্তর: সকলকে সালাম এবং শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য শুরু করা উচিত। বিদায় অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য তুলে ধরতে পারেন। আপনার সহকর্মীর সাথে প্রথম দিকের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তুলে ধরতে পারেন।
৩. সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে শেষ করা উচিত?
উত্তর: আপনার সহকর্মীর পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা জানান। পুরো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। তার জন্য দোয়া এবং শুভকামনা জানিয়ে আপনার বক্তব্য শেষ করতে পারেন।
৪. বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠানের দিনটিকে স্মৃতি মধুর করতে কি করা উচিত?
উত্তর: এই দিনটিকে স্মৃতি-মধুর করতে সুন্দর একটি বক্তব্য প্রদান করুন আপনার সহকর্মীর উদ্দেশ্যে। বক্তব্যের শুরুতে অথবা শেষে আপনার সহকর্মীকে কোনো গিফট দিতে পারেন। এটি দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৫. বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কতক্ষণ হওয়া উচিত?
উত্তর: বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত হওয়াই ভালো। সাধারণত ৫ থেকে ১০ মিনিট বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়াই যথেষ্ট।
আমাদের শেষ কথা
যেকোনো বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর সেটা যদি আপনার সহকর্মীর বিদায় হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই। অবশ্যই আপনাকে আপনার সহকর্মী বন্ধুর জন্য সুন্দর ভাবে একটি বক্তব্য উপস্থাপন করতে ভুলবেন না। কিন্তু অনেকেই স্টেজে উঠে কথা বলতে পারে না।
তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ে, কথাগুলো বেশি বেশি প্র্যাকটিস করলে সহজেই যে কোনো জায়গায় সহকর্মীর জন্য বিজয় অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখতে পারবেন। আপনার বক্তব্যের মাধ্যমে আপনার সহকর্মীকে খুশি করাতে পারেন।
সম্মানিত পাঠক আপনি জানতে পারলেন সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে দিতে হয় সে সম্পর্কে। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই নিচের লিঙ্ক এর মাধ্যমে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
অনলাইন ইনকাম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url