ভাতের মাড়ের ১০টি ক্ষতিকর দিক - গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক গুলো জানেন? ভাতের মাড়ের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে না জানলে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নিন। যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষ ভাতের উপর নির্ভরশীল সেহেতু ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভাতের মাড়ের অপকারিতার পাশাপাশি আমরা গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা, ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম, ভাতের মাড় চুলে দিলে কি হয়, ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার নিয়ম, ভাতের মাড় দিয়ে নাইট ক্রিম, ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয় এবং ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বাঙালিরা ভাত খেতে অনেক পছন্দ করে। এমনকি দিনে তিন বেলা করে তাদের ভাত খেতে হয়। তা না হলে যেন তৃপ্তি হয় না। কিন্তু ভাত রান্নার শেষের দিকে ভাতের হাঁড়ি থেকে এক ধরনের আঠালো তরল পদার্থ নির্গত হয়। এটাকেই মূলত আমরা ভাতের মাড় বলে থাকি। আবার অনেকের কাছে এটি ভাতের ফ্যান নামেও পরিচিত।
ভাতের মাড় বা ফ্যান খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তবে এটি সকলের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ নয়। বরং একজন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভাতের মাড় খাওয়া অনেক উপকারী। এমনকি রূপচর্চাতেও ভাতের মাড় ব্যবহার করা হয়। চলুন আর বেশি কথা না বলে ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক ও উপকারিতা এবং রূপচর্চায় ভাতের মাড়ের ব্যবহার গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক
সাধারণভাবে ভাতের মার খাওয়ার কোনো ক্ষতিকর দিক খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ভাতের মাড় নিয়ম অনুযায়ী খেলে কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু আপনি যখন প্রয়োজনের তুলনায় ভাতের মাড় বেশি খাবেন, তখন আপনার শরীরে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে। এরকম ভাতের মাড়ের ১০টি ক্ষতিকর দিক নিচে তুলে হলো:
- 1. বিশেষ করে সাদা চালের ভাতের মাড়ে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে এটি অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। ফলে পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। আর এসব রোগ যদি পূর্বে থেকেই থাকে, তাহলে ভাতের মাড় অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
- 2. খুব বেশি পরিমাণে ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে অনেক বেশি ঘুম পায়, ফলে অলসতা এবং ক্লান্তি আমাদের গ্রাস করতে পারে।
- 3. ভাতের মাড়ে যদিও কম পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রহণ করলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া-জনিত সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বদহজম, পেট ফোলা-ভাব, পেট ব্যথা, ক্ষুধা কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- 4. ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণ শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। যার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণ ভাতের মাড় খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে শরীরে নানা ধরনের রোগ সহজেই বাসা বাঁধতে পারে।
- 5. ভাতের মাড় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা ভাতের মাড়ে সোডিয়াম এর উপস্থিতি রয়েছে। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- 6. অনেকেই ভাতের মাড় ফেসিয়াল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু ভাতের মাড়ে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে, তারা এটি ত্বকে ব্যবহার করলে জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ফোলা ভাব এবং অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
- 7. ভাতের মাড় খোলা স্থানে রাখলে এবং পাত্র দিয়ে না ঢাকলে বেশ কিছুক্ষণ পর এতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে। তারপর এটি খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
- 8. ভাতের মার দীর্ঘ সময় ফেলে রাখার কারণে এখানে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হতে পারে। যার ফলে পেটে প্রচণ্ড অস্বস্তি এবং গ্যাস হতে পারে।
- 9. প্রতিদিন ভাতের মাড় খেলে অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় বেশি মাড় খেলে শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
- 10. ভাত রান্নার সময় মাড় আলাদা না করাই ভালো। কেননা এর কারণে ভাতে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের পরিমাণ কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা
ভাতের মাড় খাওয়ার অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা রয়েছে। গর্ভধারণ অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরী। বিশেষ করে ভিটামিন এবং প্রোটিন সহ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তেমনই ভাতের মাড় এমন একটি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যাতে অনেক উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো:
- গর্ভবতী অবস্থায় অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময় ভাতের মাড় খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কেননা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ভাতের মাড় খুব ভালো কাজ করে।
- গর্ভাবস্থায় শরীরে শক্তি প্রয়োজন হয়। শরীরের শক্তি পেতে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ভাতের মাড় বা স্টার্চ খেতে পারেন। কেননা এটি প্রচুর পরিমাণ শর্করা প্রদান করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় ভাতের মাড় খেলে। গর্ভাবস্থায় যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে ভাতের মাড়ের সাথে লবণ মিশিয়ে খেয়ে নিন। তাহলে পেটের সমস্যা দূর হবে।
- ভাতের মার থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গর্ভাবস্থায় এসব উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া চুল এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ভাতের মাড় অনেক উপকার করে।
- গর্ভধারণকালে ভাতের মাড় খেলে হাইড্রেশনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, পানি শূন্যতা দূর হয়, অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দূর করে।
এ ছিল গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা সমূহ। গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে হলে আপনাকে ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও জানতে হবে। কেননা কেবলমাত্র নিয়ম মেনে খেলেই আপনি উপকারিতা পাবেন।
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
গর্ভধারণকালে হোক আর এমনি সময় হোক ভাতের মার খাওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে ভাতের সাথেই খাওয়া। অর্থাৎ ভাত থেকে মাড় আলাদা করে না ফেলে দিয়ে, রান্নার সময় ভাতের মধ্যেই মাড় গুলো রেখে দিন। এতে ভাতের পুষ্টিগুণ অনেক গুণে বেড়ে যাবে। তবে আপনি যদি আলাদা করে ভাতের মাড় খেতে চান তাহলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম করে খেতে পারেন।
আরও পড়ুন শূকরের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা
অতিরিক্ত পরিমাণ ভাতের মাড় শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ভাতের মাড় খাবেন। আর গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাবার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ভাতের মাড় চুলে দিলে কি হয় - ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার নিয়ম
ভাতের মাড় আপনি চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারবেন। অনেকের চুলে অনেক খুশকি হয়, যা বিভিন্ন শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরেও দূর হয় না। এক্ষেত্রে আপনি ভাতের মাড় ঠাণ্ডা করে চুলের গোঁড়ায় মালিশ করুন।
কিছুক্ষণ পর মাথা ভালো ভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন, তারপর মাথায় শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এতে আপনার মাথার খুশকি, ময়লা দূর হবে। ভাতের মাড় চুলে ব্যবহার এর মাধ্যমে মাথার ত্বকও ভালো থাকে।
ভাতের মাড় দিয়ে নাইট ক্রিম
হাতের মাড় দিয়ে তৈরি করে ফেলুন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিকারী নাইট ক্রিম। রান্নার সময় ভাত থেকে মাড় গুলো আলাদা করে রেখে দিন। তারপর কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা করুন তাহলে দেখবেন এটি ক্রিমের মতো হয়ে গিয়েছে। এরপর ভাতের মায়ের সাথে অ্যালোভেরা জেল মেশান। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আপনার ভাতের মাড়ের নাইট ক্রিম।
আরও পড়ুন মাছের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা
এই ক্রিমটি আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মুখে 10 থেকে 15 মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তাহলে ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেক গুণে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আপনি চাইলে এই ক্রিমটি চুলেও ব্যবহার করতে পারবেন। এতে চুলের উপকার হবে।
ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয় - ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম
অনেকেই জানতে চান ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয়। ভাতের মাড়ে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যার মাধ্যমে ত্বকের দাগ দূর হয়, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এই ভাতের মাড় আপনি ঠাণ্ডা করে সরাসরি মুখে ব্যবহার করতে পারেন বা চাইলে ভাতের মার দিয়ে নাইট ক্রিম তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিদিন ভাতের মাড় মুখে ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক উপকারিতা লক্ষ্য করতে পারবেন।
FAQs: ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক - গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
১. ভাতের মাড় কি?
উত্তর: ভাত রান্না করার সময় চাল থেকে সাদা দুধের মতো যে নরম তরল পদার্থ বের হয় সেটিই হচ্ছে ভাতের মাড়। ভাতের মাড়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
২. ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি?
উত্তর: অতিরিক্ত ভাতের মাড় খেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো হলো এটি অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে, অতিরিক্ত শর্করার কারণে ডায়াবেটিস এবং কিডনির সমস্যা হতে পারে, এমনকি পেটের সমস্যা ও হতে পারে।
৩. ভাতের মাড় কিভাবে পেতে পারি?
উত্তর: আমাদের সকলের বাড়িতেই কম বেশি ভাত রান্না করা হয়। চালে পানি দিয়ে যখন রান্না করা হয়, কিছুক্ষণ পর আগুনের তাপে পানিগুলো ফুটতে শুরু করে। এ সময় ভাতেরে হাড়ের ঢাকনা সামান্য পরিমাণ খুলে রাখতে হবে। তাহলে দেখবেন এক ধরনের তরল পদার্থ ঢাকনায় এসে জড়ো হচ্ছে। এটিই হলো ভাতের মাড়। এভাবে আপনি ভাতের মাড় পেতে পারেন।
সর্বশেষ কথা
ভাতের মাড় হলো প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। সঠিকভাবে খেতে পারলে আপনারা হজমের সমস্যা দূর হবে, চুল এবং ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারবেন। শরীর দুর্বল হলে ভাতের মাড় খান, তাহলে দুর্বলতা দূর হবে। ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খান। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ভাতের মাড় খেলে হতে পারে পেটের সমস্যা এবং ওজন বৃদ্ধি।
সম্মানিত পাঠক আজকের মূল আলোচনা ছিল ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক এবং গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনি ভাতের মাড় সম্পর্কে জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
অনলাইন ইনকাম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url