লাইলাতুল কদর কি - লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা
সম্মানিত মুসলিম ভাই এবং বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর বিশেষ রহমতে সকলেই ভাল আছেন। বর্তমানে মাহে রমজান মাস চলছে তাই অনেকেই লাইলাতুল কদর কি, লাইলাতুল কদর এর ফজিলত, লাইলাতুল কদরে করণীয়, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস, এক কথায় লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা শুনতে চান বা এ সম্পর্কে জানতে চান।
আজকে আমরা লাইলাতুল কদর সম্পর্কে খুঁটিনাটি সকল তথ্য তুলে ধরব যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়া আমরা আরও আলোচনা করব শবে কদরের রাত চেনার উপায়, শবে কদরের নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদত সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটি আমলের নিয়তে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অনেক ভালবাসেন। আমরা হলাম শেষ এবং শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত। তাই আমাদেরকে আল্লাহ তাআলা অনেক স্পেশাল কিছু দিন বা রাত দিয়েছেন। যেই দিন গুলোর অনেক ফজিলত রয়েছে।
এই দিন বা রাত গুলোতে অল্প আমলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়, দোয়া কবুল হয়। ঠিক তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাতের নাম হলো লাইলাতুল কদর। শুরুতে আমরা লাইলাতুল কদর কি সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
লাইলাতুল কদর কি
আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর কে অনেকেই আবার শবে কদর বলে থাকে। লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের অর্থ হলো সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রাত্রি, মর্যাদাপূর্ণ রাতও বলা যেতে পারে।
এই রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বা মর্যাদা সম্পন্ন। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর কি কারণে এতোটা মর্যাদা সম্পন্ন হলো সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
লাইলাতুল কদর হাজার মাস এর চেয়েও উত্তম হওয়ার কারণ হলো এই রাতে পবিত্র আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য। এই রাতে যদি কেউ ইবাদত করে তাহলে হাজার মাস ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা করব এখন। পবিত্র এই রাতটি সকল মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে লাইলাতুল কদর রমজান মাসেই পাওয়া যায়। কেননা আল্লাহতালা বলেছেন তিনি রমজান মাসেই পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন।
আবার ওপর এক বর্ণনায় পাওয়া যায় শবে কদরের রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল করা হয়েছে। সুতরাং কোথায় গেল পবিত্র লাইলাতুল কদরে আল কোরআন আবার অবতীর্ণ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা কদরের তিন নাম্বার আয়াতে আমরা দেখতে পাই মহান আল্লাহ বলেন, শবে কদর হাজার মাস থেকে উত্তম।
অর্থাৎ আপনি যদি একটি কদরের রাত পেয়ে থাকেন এবং সেই রাতে ইবাদত করেন তাহলে এক হাজার মাস ইবাদত করলে যেই পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায় সেই পরিমাণ সওয়াব আপনি পেয়ে যাবেন। নিচে আরও বিস্তারিত ভাবে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
লাইলাতুল কদর এর ফজিলত
লাইলাতুল কদর এর ফজিলত অনেক বেশি। কোনো ঈমানদার ব্যক্তি যদি এই রাতে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় ইবাদত করে তাহলে মহান আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। এই রাতে আল্লাহর ইবাদত করলে হাজার মাস ইবাদত বন্দেগী করার নেকি পাওয়া যায়।
হাজার মাস কে বিশ্লেষণ করলে আমরা ৮৩ বছর ৪ মাস পাই। অর্থাৎ লাইলাতুল কদরে এবাদত করলে ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার সওয়াব আপনি পেয়ে যাবেন। আপনি যদি প্রতিবছরই লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতে ইবাদত করেন তাহলে প্রত্যেকবারই ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার সমান সওয়াব পাবেন।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরআন হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে। পবিত্র আল কোরআনে কদর নামে একটি সূরা বর্ণিত হয়েছে। এখানে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
কোরআনের পাশাপাশি অনেকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস জানতে চায়। তাই এখন আমরা লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস খুলে ধরব। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে নিচে তিনটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:
- ১. লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস: সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যেই ব্যক্তি শবে কদরের ঈমানের সাথে এবং নেকি পাওয়ার নিয়তে নামাজের জন্য দাঁড়ায় তার পেছনের সকল পাপ মোচন করে দেওয়া হয়। এই হাদিসটি সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে।
- ২. রাসুলের প্রিয় স্ত্রী হযরত আম্মাজান আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল রমজানের শেষ 10 দিন ই'তিকাফ করতেন আর বলতেন যে, রমজানের শেষ 10 রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করো। অর্থাৎ রমজান মাসের ১৭ তারিখ হতে শবে কদরের তালাশ করতে হাদিসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই হাদিসটিও সহিহ মুসলিম ও বুখারীতে পাওয়া যায়।
- ৩. আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা) হতে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: রমজানের শেষ 10 দিন আরম্ভ হলে লাইলাতুল কদরের নিয়ত করে আল্লাহর রাসূল সম্পূর্ণ রাত্রি জেগে ইবাদত করতেন, নিজের পরিবারের সদস্যদেরকেও জাগাতেন এবং (আল্লাহর ইবাদতে) খুব বেশি সাধনা ও পরিশ্রম করতেন। (বোখারী ও মুসলিম)
সম্মানিত পাঠক এ ছিল গুরুত্বপূর্ণ তিনটি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস।
লাইলাতুল কদরের করণীয়
লাইলাতুল কদরে বেশ কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় কাজ রয়েছে। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত, আর এই রাত রমজানের যেকোনো তারিখে হতে পারে। সেজন্য রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে।
এজন্য রমজান মাসের প্রত্যেক রাতে শবে কদরের নিয়তে ইবাদত করার চেষ্টা করবেন। শবে কদরের ইবাদতের সওয়াব যেমন হাজার রাতের সমান, ঠিক এর বিপরীত অর্থাৎ গুনাহের বদলা যে কতো কঠিন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।
সেই সাথে কদরের পবিত্র রাতে ইবাদত বন্দেগী ব্যতীত অন্যান্য যেসব বিদআতী নিয়ম কানুনের প্রচলন রয়েছে তা পরিহার করা আবশ্যক।
শবে কদরের রাত চেনার উপায়
বেশিরভাগ দলিল এবং আলেমদের মত অনুযায়ী শবে কদরের রাত রমজান মাসেই পাওয়া যায়। এটি নিশ্চিত যে রমজান মাসেই শবে কদরের রাত অন্তর্ভুক্ত। শবে কদরের রাত চেনার উপায় রয়েছে। হাদিসে পাওয়া যায় আল্লাহর রাসূল বলেছেন, শবে কদর রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে ( অর্থাৎ 21, 23, 25, 27, 29 তারিখে) বা রমজানের শেষ রাত্রে হয়। শবে কদর রাত চেনার উপায় হলো:
- শবে কদরের রাত্রটি নির্মল ঝলমলে হবে।
- রাতে ঠাণ্ডা আবহাওয়া থাকবে এবং হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
- নিঝুম, নিথর, নাতিশীতোষ্ণ চারিদিক আলোকিত মনে হবে।
- ঈমানদারের অন্তরে অন্যরকম পুলক অনুভূত হবে।
- আরেকটি চেনার উপায় হলো এই রাতের পরদিন সকালে সূর্য কিরণবিহীন একেবারে গোলাকার পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উদিত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, শবে কদরের জন্য ২৭ তারিখ রাত নির্দিষ্ট নয়। বরং রমজানের ভেতর যেকোনো রাত হতে পারে। তাই শবে কদরের উদ্দেশ্যে প্রতিদিনই কিছু না কিছু ইবাদত করা উচিত।
শবে কদরের নামাজ
শবে কদরে আলাদাভাবে অন্য কোনো নিয়মে নামাজ পড়ার হুকুম নেই। তবে শবে কদরে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করতে হবে। এক সালামে দুই, চার সর্বোচ্চ ৮ রাকাত করে নফল নামাজ পড়া যায়। এই নামাজের ভিন্ন কোনো নিয়ম বা নিয়ত নেই বরং সাধারণ নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে।
আরও পড়ুন অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট
এছাড়াও কিছু সময় কোরআন তেলাওয়াত করা, কিছু সময় জিকির করা, কিছু সময় দোয়া করা, এভাবে ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে দিয়ে শবে কদরের রাত অতিবাহিত করা উচিত। তবে অতিরিক্ত নামাজ পড়তে গিয়ে ফজরের নামাজ যেন নষ্ট না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
উপসংহার
লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যা একজন ঈমানদারের জন্য অসংখ্য কল্যাণ বয়ে আনে যদি সে এই রাত্রিতে ইবাদত করতে পারে। এই রাতে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজকার, দান খয়রাত ইত্যাদি সব ধরনের ইবাদত করা উচিত। যদি জীবনে একবারও শবে কদরে ইবাদত করা কারো ভাগ্যে জুটে যায় তাহলে তার মতো ভাগ্যবান আর কে আছে!
সম্মানিত পাঠক আপনি জানতে পারলেন লাইলাতুল কদর কি এবং লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা। ভেতর আরও জেনেছেন করব শবে কদরের রাত চেনার উপায়, শবে কদরের নামাজ, লাইলাতুল কদর এর ফজিলত, লাইলাতুল কদরে করণীয়, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে।
আপনার যদি লাইলাতুল কদর বা শবে বরাত সম্পর্কে আরও কোনো প্রশ্ন থাকবে তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। আজকে এ পর্যন্তই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সাবেক কদরের রাতে ইবাদত করার সৌভাগ্য দান করুন, আমীন।
অনলাইন ইনকাম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url