মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম - কি কি শব্দ বললে তালাক হয়?

সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা অনেকেই রয়েছেন যারা সংসার জীবনে সুখে নেই বিভিন্ন কারণে। তাই স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য মুখে তালাক দিতে চান। কিন্তু মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাদের জন্যই মূলত আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।
মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম, কি কি শব্দ বললে তালাক হয়, ১ তালাক দিলে কি হয়, তালাক দিব বললে কি তালাক হয়? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর। এছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরব যা সকলেরই জানা প্রয়োজন। তাই এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

বর্তমান সময় দেখা যাচ্ছে তালাক বা ডিভোর্সের সংখ্যা তিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ইসলামে তালাক দেওয়ার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। অনেকেই স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন‍্য বা স্ত্রী যেন শুধরে যায় সে জন্য মুখে তালাক দিয়ে থাকে।

কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো অনেকে রাগের মাথায় ৩ তালাক পর্যন্তও দিয়ে ফেলে। এ বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকা উচিত এবং নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। চলুন আর বেশি কথা না বলে এখন মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম

যখন আপনার স্ত্রী আপনার অবাধ্য হবে, আপনার হক আদায় করবে না, ইসলামী বিধি বিধান অনুযায়ী চলবে না তখন তাকে সোজা পথে আনার জন্য মুখে তালাক দিতে পারেন। তবে শুরুতে ভুলেও একবারে ৩ তালাক দিবেন না। এটি জায়েজ হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট একটি কাজ।

মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম হলো, যদি স্ত্রী বৈধ কথা না মানে বা ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাকে আস্তে করে ডেকে স্পষ্ট ভাষায় বলবেন আমি তোমাকে ১ তালাক দিলাম। ব্যাস তাহলেই তালাক হয়ে যাবে। এটিই হচ্ছে মুখে তালাক দেওয়ার সর্বোত্তম নিয়ম। তবে সুন্নাত হলো দুজন সাক্ষী নিযুক্ত করা তারপর তালাক দেওয়া।

প্রথমে স্ত্রীকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে যদি সে কোনো অন্যায় করে থাকে। তারপরেও যদি না মানে তাহলে বারবার বোঝান। তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে তাকে ১ তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিন অথবা চাইলে একসঙ্গে থাকতে পারেন, আর এটিই উত্তম। তারপর সম্পর্ক ঠিক হলে ফিরিয়ে আনুন।

আবার বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর যদি দেখেন স্ত্রীর পুনরায় আপনার হক আদায় করছে না অথবা ইসলামী বিধি বিধান অনুসরণ করছে না তাহলে আবার একই পদ্ধতিতে দুজন সাক্ষী সহ স্ত্রীকে বলতে পারেন আমি তোমাকে ২ তালাক দিলাম।

তারপর স্ত্রী নিজ বাসস্থানে অবস্থান করবে, চাইলে স্বামীর বাড়িতেও থাকতে পারবে। মনে রাখবেন আপনি কিন্তু ২ তালাক পর্যন্ত দিয়েছেন এবং ফিরিয়ে আনারও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এরপর যদি আবারও আপনি তালাক দিয়ে থাকেন তাহলে আর স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবেন না।
তখন একবারেই তালাক হয়ে যাবে অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে এবং তারা আর বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে না। (তবে হানাফি মাজহাব অনুযায়ী পুনরায় যদি বিবাহ করতে চান তাহলে হালালাহ করতে হবে) সুতরাং যা করবেন ভেবেচিন্তে ঠাণ্ডা মাথায় করবেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই তা হলো স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্ত্রী পবিত্র অবস্থায় থাকে জরুরী। তালাক সম্পর্কিত যেকোনো প্রয়োজনে কোনো আলেমের শরণাপন্ন হতে পারেন। আশাকরি মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি বুঝতে পেরেছেন।

কি কি শব্দ বললে তালাক হয়

বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে তালাক কার্যকর হয়ে যায়। ভুল করে, ঠাট্টা করে বা রাগের মাথায় এ সকল শব্দ বললে তালাক হয়ে যাবে। যদি কোনো শব্দ ব্যবহার করে কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে যদি বোঝাতে চায় যে তাকে তালাক দিচ্ছে বা দিয়েছে, তাও তালাক কার্যকর হবে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। যেসব শব্দ বললে তালাক হয় তাহলো:
  • তুমি তালাক।
  • তোমাকে তালাক।
  • আমি তালাক দিলাম।
  • তোমাকে ছেড়ে দিলাম।
  • তোমাকে তালাক দিলাম।
  • আমি তোমাকে তালাক দিচ্ছি।
  • তোমাকে খুশি মনে তালাক দিলাম।
  • তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিলাম।
  • এখন থেকে তুমি আমার বউ বা স্ত্রী নও।
  • তোমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই, তুমি তালাক।
সম্মানিত পাঠক আপনি যদি ইশারা ইঙ্গিতেও আপনার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকেন তাহলেও তালাক কার্যকর হবে যদি আপনি আগে তালাক দেওয়ার নিয়ত করে থাকেন।
আর যদি ইশারা ইঙ্গিতে তালাক দিয়ে থাকেন যেমন যাও তুমি স্বাধীন, এমন বাক্য বললে যদি তালাকের নিয়ত না থাকে তাহলে তালাক হবে না। আর সরাসরি স্পষ্ট ভাবে যদি তালাক দিয়ে থাকেন তাহলে নিয়ত থাকুক বা না থাকুক তালাক কার্যকর হবে। কি কি শব্দ বললে তালাক হয় আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

১ তালাক দিলে কি হয়

অনেকেই ১ তালাক দিলে কি হয় সে সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। ১ তালাক দিলে বউ তালাকপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু বিবাহ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয় না। ১ তালাক দেওয়ার সাথে সাথে ইদ্দত শুরু হয়ে যায়। এই ইদ্দতের মধ‍্যে স্বামী যদি চান তার বউকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারেন এটাকে ইসলামের ভাষায় রুজু বলা হয়।

আর যদি আমি ফিরিয়ে না আনে এবং ইদ্দত শেষ হয়ে যায় তাহলে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে আপনি চাইলে আবার সেই মেয়েকে বিবাহ করে স্ত্রী বানাতে পারবেন। ১ তালাক দিলে স্ত্রীর জন্য সাজগোজ করা, অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ১ তালাক দিলে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয় না তাই পুনরায় বিয়ে করার প্রয়োজন হয় না।

তালাক দিব বললে কি তালাক হয়?

অনেকেই নিজের স্ত্রীকে তালাক দিব বলে থাকেন। তাই পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে থাকেন তালাক দিব বললে কি তালাক হয়? সে সম্পর্কে। তালাক দিব বললে তালাক হবে কিনা সেটি নির্ভর করবে আপনার নিয়তের উপর।

আপনি যদি বলে থাকেন অমুক কাজ না করলে অথবা অমুক কাজ করলে তোমাকে তালাক, আর এটিই যদি নিয়তে থাকে আর স্ত্রী যদি সে কাজ করে ফেলে তাহলে তালাক হয়ে যাবে। তবে এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
মূলত কোন ইঙ্গিতে, কোন ভঙ্গিতে বা কোন প্রসঙ্গে তালাক দিয়েছেন সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এজন্য একজন বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হতে পারেন এ বিষয়টি নিয়ে।

FAQ: মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম - কি কি শব্দ বললে তালাক হয় সে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

১. মুখে তালাক দেওয়া কি জায়েজ?

উত্তর: হ‍্যাঁ। মুখে তালাক দেওয়া ইসলামী শরীয়ত সম্মত কাজ। কেননা হাদিস শরীফ অনুযায়ী কেউ যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মুখে তালাক দেয় তাহলে সেটি কার্যকর হয়ে যাবে। সুতরাং মুখে তালাক দেওয়া জায়েজ।

২. আমি যদি আমার বউকে রাগের মাথায় বলেছি: তুমি আজকে চলে যাও তোমাকে তালাক দিলাম তাহলে কি তালাক হবে?

উত্তর: হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি রাগের মাথায় অথবা খুশিতে অথবা ভুলে যদি আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে থাকেন বা স্পষ্ট ভাষায় বলে থাকেন আমি তোমাকে তালাক দিলাম তাহলে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।

৩. তালাক দিলে ইদ্দত পালন করার ব‍্যাপারে কোরআনে কোথায় বলা আছে?

উত্তর: তালাক দিলে স্ত্রীকে অবশ্যই ইদ্দত পালন করতে হবে। কেননা পবিত্র কোরআনের সূরা আল বাকারার ২২৮ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ ইদ্দত পালন করার ব‍্যাপারে বলেছেন।

উপসংহার

মুখে তালাক দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে সকলেরই বিস্তারিত জানা উচিত। কেননা একবারে তিন তালাক দিয়ে দিলে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে শয়তান অনেক খুশি হয় এবং মহান আল্লাহ নারাজ হয়ে যান। তাই তালাক দেওয়ার ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকা উচিত।

খেয়াল রাখতে হবে রাগের মাথায় তিন তালাক দেওয়া যাবে না। সম্মানিত পাঠক আশা করি আপনি মুখে তালাক দেওয়ার নিয়ম, কি কি শব্দ বললে তালাক হয়, ১ তালাক দিলে কি হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।

তালাকের মাসআলা অনেক জটিল, তাই আপনি যদি তালাক দিয়ে দেন বা তালাক দিতে চান তাহলে একজন বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। অন্যদের উপকৃত করতে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন এবং আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অনলাইন ইনকাম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url